আগে একটা রচনা পড়তাম "দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান"... তাতে একটা লাইন ছিল," বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে উদ্বেগ" ....সত্যিই তাই... প্রিয়জনের জন্য আমাদের খুব বেশি উদ্বিগ্ন হতে হয় না এখন... আমরা চাইলেই এগার ডিজিটের নাম্বার ডায়াল করে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে থাকা প্রিয়জনের সাথে কথা বলতে পারি...আগে যখন চিঠির মাধ্যমে প্রিয়জনের খবর পেতে হত তখন ব্যাকুলতা অনেক বেশি ছিল... দিনের পর দিন কাছের মানুষদের খবর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকা...ডাকপিয়ন এসে সাইকেলের বেল বাজালেই হৃদয় ধক্ করে ওঠা... এই বুঝি এল বহু প্রতিক্ষীত সেই চিঠি... চিঠির প্রতিটি শব্দে হাত বুলিয়ে দেখা... ওতে যে প্রিয় মানুষগুলোর স্পর্শ আছে... কে জানে হয়ত দু ফোটা চোখের জলও... কি পরম মমতা নিয়ে বারবার প্রতিটি শব্দ পড়া... পরের চিঠি না আসা পর্যন্ত এতবার হয়ত পড়া হত যে প্রতি অক্ষরের ছাঁদ ও মুখস্ত হয়ে যেত....হায়!! সেই সুখস্মৃতি আমরা অনুভব করতে পারলাম কোথায়... !!! যদি পারতাম হয়ত অন্য এক দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ থাকতাম প্রিয়জনের সাথে...!!! আসলে আমরা এমনই..।এক ঝলক আলোর গুরুত্ব তখনই বোঝা যায় যখন এক রাশ অন্ধকার ঘিরে আসে চারদিক... আপনার কাছের মানুষগুলো কাছাকাছি থাকলে আপনি তাদের ভাল লাগা খারাপ লাগা হয়ত অনায়াসেই এড়িয়ে যেতে পারেন... আর দূরে গেলে সেই আপনিই নিজের অনেক বড় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হলেও তাকে ভাল রাখতে চাইবেন...। কিন্তু কাছে থাকার পরেও সবসময় কি সবকিছু হয় যেমনটা হওয়া উচিত বা যেমনটা আমরা চাই? কোথায় যেন কে এক অদ্দৃস্য কলকাঠি নাড়ছে আর দিন বদলের পালাতে চেনা জানা মুখগুলোও কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। তবে এটাও সত্যি, সবার জীবন বিশেষ একজনকে নিয়ে বদলে যায় না... কারও কারও বিশেষ মানুষ অনেকগুলো থাকে।আমার স্কুল লাইফের বোরিং অপছন্দের দিনগুলো হুট করে সুন্দর হয়ে গিয়েছিল বন্ধুরা শুধু তোদের জন্য... আমি বন্ধু-বন্ধুত্বের সত্যিকার অর্থ তখনই বুঝেছি। একজনের জায়গাটা হয়ত একটু প্রশস্তই ছিল, তখনের আবেগ ও বেশিই ছিল... বন্ধুত্বের জন্য জীবন দিয়ে দেয়ার মত আবেগ! কলেজ লাইফের স্মৃতি একটু বেশিই তিক্ত... একই মানুষ এর অনেকগুলো রুপ দেখার অদ্ভূত অভিজ্ঞতা... তবে এখানেই সত্যিকারের মানুষ দেখেছি আমি... ভাল আর খারাপ যে পাশাপাশিই থাকে তার প্রমাণ পেয়েছি এখানেই.... জীবনকে খুব কাছে থেকে দেখতে শিখেছি এখানেই... আড়ালে থাকা ভাল মানুষকে চিনেছি এখানেই... অর্থাৎ তিক্ত অভিজ্ঞতা স্বত্তেও এই সময়টা অনেক কিছু শিখিয়েছে আমাকে... ভাঙনের গল্প শুরু হয়েছিল একজনের চিরতরে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে.... ধাক্কাটা সামলানো এত সহজ ছিল না... আত্নার অংশ কেটে গেলে কষ্ট তো হবেই.... সুতোটা কেটে গেল... শুরু হল সবার আলাদা গল্প শুরু করার সময়। ভেবেছিলাম যে অন্তত একই জায়গায় থাকবে সেও বদলে গেল.... আবার একটা ধাক্কা.... এই ধাক্কা আবার শেখালো সবাই বদলে যায়। দিনশেষে তুমি আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলেও পাশে কাউকেই পাবে না.... বড় একটা পরিবর্তন আনলো এই শিক্ষা... নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকার শিক্ষা.... তাও আর হল কই.... ততদিনে অন্য দুটো মায়ার জালে বন্দী অস্তিত্ব..... ঝগড়া খুনসুটি আর রাগের আড়ালের ভালবাসার বন্ধুত্বের গল্প.... কিছুদিন আগের রগরগে ধাক্কা টা অবশ্য মনে করিয়ে দিত এরাও বদলে যাবে.... তুমি আবার কষ্ট পাবে.... তবুও মন বিশ্বাস করতে চাইত... এদুটো বোধহয় ধ্রুব সত্য .... বদলাবে না।। হায়... মন কেন ভুলে যায় বারবার কিছুই ধ্রুব নয় ... সব বদলায়.... সেদিন তর্কে জেতার জন্য বলেছিলাম তোরা দুজন বিশেষিত বিশেষ কেউ নোস... পরে বুঝেছি ভুল ছিল কথাটা ... তোরা যদি বিশেষের মধ্যে বিশেষ না হতি তাহলে তোদের দুজনের বদলে যাওয়া আমার মনের মধ্যে এতটা বাজত না.... আজ আর শেষ বেলায় কার দোষ ছিল খুঁজতে ইচ্ছে করে না... যে বদলে যায় দোষ তার নয় বরং ব্যার্থতা তার যে বদলাতে পারে না.... এতগুলো বদলের গল্প একটা জিনিস ই শিখিয়েছে, নির্লিপ্ত হতে হয়.... ভালবাসা মনের মধ্যে সিন্দুকে তালা দিয়ে রাখতে হয়। তুমি যত বেশি ভালবাসা বদ্ধ দরজার আড়ালে রেখে দিবে তার মূল্য হবে তত বেশি.... প্রকাশ করলেই খেলো হয়ে যাবে.....